ফ্রোজেন শোল্ডার (Frozen Shoulder) কী?
ফ্রোজেন শোল্ডার, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস (Adhesive Capsulitis) নামে পরিচিত। এটি একটি অবস্থা যেখানে কাঁধের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। এতে হাত ওঠানো-নামানো বা ঘোরানো কঠিন হয়ে পড়ে।
ফ্রোজেন শোল্ডারের কারণ:
ফ্রোজেন শোল্ডারের নির্দিষ্ট কারণ সবসময় জানা যায় না, তবে কিছু সাধারণ কারণ ও ঝুঁকি রয়েছে—
✔ আঘাত বা অস্ত্রোপচার: কাঁধে আঘাত পাওয়া বা অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ সময় কাঁধ না নাড়ালে হতে পারে।
✔ ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ফ্রোজেন শোল্ডারের ঝুঁকি বেশি।
✔ আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগ: বাতের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফ্রোজেন শোল্ডার হতে পারে।
✔ বয়স ও লিঙ্গ: সাধারণত ৪০-৬০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, এবং মহিলাদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে।
ফ্রোজেন শোল্ডারের লক্ষণ:
ফ্রোজেন শোল্ডার সাধারণত তিনটি ধাপে হয়:
১) ব্যথার ধাপ (Freezing Stage) – ধীরে ধীরে কাঁধে ব্যথা শুরু হয়, যা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। (৩-৯ মাস স্থায়ী হতে পারে)
২) জমাট বাঁধার ধাপ (Frozen Stage) – ব্যথা কিছুটা কমে, তবে কাঁধ শক্ত হয়ে যায় এবং নড়াচড়া করা কঠিন হয়। (৪-১২ মাস স্থায়ী হতে পারে)
৩) সেরে ওঠার ধাপ (Thawing Stage) – ধীরে ধীরে কাঁধের নড়াচড়া স্বাভাবিক হতে শুরু করে। (৬ মাস – ২ বছর লাগতে পারে)
ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসা:
✅ ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি: কাঁধের হালকা স্ট্রেচিং ও ব্যায়াম
✅ ব্যথানাশক ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ
✅ইনজেকশন: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন পিআরপি অথবা স্টরয়েড ইনজেকশন) ব্যথা কমাতে গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
✅ অস্ত্রোপচার (সংকটজনক পরিস্থিতিতে): যদি ফিজিওথেরাপি বা ওষুধে কাজ না করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে কাঁধের জয়েন্ট ম্যানিপুলেশন বা অস্ত্রোপচার করা হতে পারে।
ফ্রোজেন শোল্ডার প্রতিরোধের উপায়:
✔ কাঁধের নিয়মিত ব্যায়াম করুন
✔ কাঁধে আঘাত পেলে দ্রুত চিকিৎসা নিন
✔ দীর্ঘ সময় কাঁধকে স্থির না রেখে ধীরে ধীরে নড়াচড়া করুন
ফ্রোজেন শোল্ডার ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। যদি কাঁধের ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।